ভিউ এবং ক্লিকের ভিত্তিতে গুগল অ্যাডসেন্সে আয়: জানুন বিস্তারিত

 গুগল ব্লগে পোষ্ট মনিটাইজেশন পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে ব্লগপোষ্ট মনিটাইজেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো:

ভিউ এবং ক্লিকের ভিত্তিতে গুগল অ্যাডসেন্সে আয়: জানুন বিস্তারিত

১. গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট তৈরি 

গুগল অ্যাডসেন্স হল গুগলের এক প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। প্রথমে আপনাকে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।

ধাপগুলো:

  • গুগল অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটে যান: AdSense
  • অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন: আপনার ব্লগের URL ও অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য দিন। অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট তৈরির পর আপনার সাইটটি পর্যালোচনা হবে।
  • প্রত্যাখ্যান না হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
    • ব্লগের কন্টেন্ট অবশ্যই মৌলিক এবং আকর্ষণীয় হতে হবে।
    • ব্লগের ডিজাইন পরিষ্কার ও ব্যবহারবান্ধব হওয়া উচিত।
    • ব্লগে কোনো ধরনের কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয়নি এমন কনটেন্ট থাকা উচিত।


২. ব্লগের কনটেন্ট উন্নত করা 

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার জন্য ব্লগের কনটেন্ট ভাল মানের হতে হবে। আপনি যেই ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছেন, সেটি অবশ্যই গুণগত মানের, তথ্যপূর্ণ, এবং পাঠকের জন্য উপযোগী হতে হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • মূল্যবান কনটেন্ট তৈরি করুন: পাঠকের জন্য উপকারী এবং মূলধারায় বিষয়বস্তু তৈরি করুন।
  • নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন: বিশেষায়িত বা নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করলে পাঠক আকৃষ্ট হতে পারে।
  • SEO (Search Engine Optimization): কনটেন্ট SEO-ফ্রেন্ডলি হতে হবে। আপনার কনটেন্টে সঠিক কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন, ভালো টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশন এবং কন্টেন্ট হেডিং ব্যবহার করুন।


৩. ট্রাফিক অর্জন

গুগল অ্যাডসেন্স পেতে আপনার ব্লগে পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রাফিক থাকা আবশ্যক। সাধারণত, গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০০০ ভিজিটর প্রতিদিন বা মাসে ১০,০০০ পেজ ভিউ থাকতে হবে।

ট্রাফিক বৃদ্ধির জন্য কিছু পদ্ধতি:

  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ব্লগ শেয়ার করুন।
  • গুগল অ্যাডস ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন: প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞাপন চালালে আরও বেশি ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং: এফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন যা ব্লগের ভিজিটরদের আরো আকর্ষিত করবে।


৪. অ্যাডসেন্স পলিসি ফলো করা

গুগল অ্যাডসেন্সের কিছু নির্দিষ্ট পলিসি রয়েছে, যেগুলি ব্লগের কনটেন্ট ও আচরণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই পলিসি অনুযায়ী ব্লগে কোনো অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট যেমন পিরেটেড মুভি, পর্নোগ্রাফি, বা সহিংস কনটেন্ট থাকলে তা বাতিল হয়ে যেতে পারে।

অ্যাডসেন্স পলিসির মূল বিষয়গুলি:

  • কপিরাইট লঙ্ঘন থেকে দূরে থাকুন।
  • অশ্লীল বা ক্ষতিকর কনটেন্ট না রাখুন।
  • ব্লগের নেভিগেশন সহজ এবং স্পষ্ট রাখুন।
  • গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন নীতির সাথে তাল মিলিয়ে ব্লগ চালান।


৫. আবেদন এবং পর্যালোচনা প্রক্রিয়া

একবার আপনার ব্লগ প্রস্তুত এবং ট্রাফিক বৃদ্ধি পেলে, আপনি গুগল অ্যাডসেন্সে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার পর, গুগল আপনার সাইটটি পর্যালোচনা করবে। তারা যদি আপনার সাইটকে অনুমোদন দেয়, তবে আপনি ব্লগে অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন চালু করতে পারবেন।

এখানে কিছু ধাপঃ

  • আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।
  • ব্লগের URL যুক্ত করুন।
  • অ্যাডসেন্স কোড ব্লগে ইনস্টল করুন এবং বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ব্লগের যেকোনো জায়গায় অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন সন্নিবেশ করুন।


৬. অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন সেট আপ করা

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর আপনি আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন চালু করতে পারবেন। অ্যাডসেন্স আপনার সাইটে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে, যেমন টেক্সট, ব্যানার, বা ভিডিও।

বিজ্ঞাপন সেটআপ প্রক্রিয়া:

  • অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে লগইন করুন।
  • ‘Ads’ অপশনে গিয়ে নতুন বিজ্ঞাপন তৈরি করুন।
  • বিজ্ঞাপনটির সাইজ ও ফর্ম্যাট নির্বাচন করুন।
  • কোডটি কপি করে ব্লগের HTML কোডে পেস্ট করুন।


৭. রেভিনিউ ট্র্যাকিং

ব্লগের বিজ্ঞাপন থেকে আয় শুরু হলে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স ড্যাশবোর্ডে লগইন করে রেভিনিউ ট্র্যাক করতে পারবেন। এছাড়া, মাসিক আয়ের রিপোর্টও পাবেন।


৮. নিয়মিত কনটেন্ট আপডেট এবং মনিটাইজেশন অপ্রুভড রাখুন

এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার ব্লগ নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে এবং সবসময় গুগল অ্যাডসেন্সের পলিসি অনুসরণ করা হচ্ছে।

এই সব বিষয় মেনে চললে, আপনার ব্লগ থেকে গুগল অ্যাডসেন্স মনিটাইজেশন শুরু করা সম্ভব হবে।


কত ভিউ এর জন্য কেমন পেমেন্ট হয়ে থাকে:

গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে পেমেন্ট নির্ভর করে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর, যেমন: ভিউ (Page Views), ক্লিকস (Clicks), বিজ্ঞাপনের ধরণ, বিজ্ঞাপনের প্রকার এবং আপনার ব্লগের ট্রাফিকের ধরন। তবে, গুগল অ্যাডসেন্সে কনটেক্সট রিলেটেড বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, যা আপনার ব্লগের কনটেন্ট এবং আপনার দর্শকদের আগ্রহের সাথে সম্পর্কিত। এখানে মূল কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে কীভাবে পেমেন্ট হয়ে থাকে তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করছি:

১. Cost Per Click (CPC):

গুগল অ্যাডসেন্সের প্রধান আয় হলো "CPC" বা "Cost Per Click", যেখানে আপনি প্রতি ক্লিকের জন্য পেমেন্ট পান। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে ভিজিটর যদি ক্লিক করেন, তখন আপনি কিছু পরিমাণ টাকা আয় করবেন। CPC পেমেন্টের পরিমাণ নির্ভর করে কয়েকটি ফ্যাক্টরের উপর:

  • বিজ্ঞাপনের ধরণ
  • ক্লিকের স্থান
  • আপনার ব্লগের কনটেন্ট
  • ভিজিটরের লোকেশন (যেমন, USA বা UK থেকে ভিজিটরের ক্লিক বেশি মূল্যবান হতে পারে)

সাধারণ পেমেন্ট রেঞ্জ:

  • প্রতি ক্লিক $0.05 থেকে $5 পর্যন্ত হতে পারে।
  • কিছু প্রিমিয়াম নীচে ক্লিকের জন্য $10 বা তার বেশি পাওয়া যেতে পারে (যেমন, ফাইন্যান্স বা মেডিকেল ক্ষেত্রের বিজ্ঞাপনগুলি)।


২. Cost Per Thousand Impressions (CPM):

গুগল অ্যাডসেন্সে CPM পদ্ধতিতে আপনি প্রতি 1000 ভিউ বা ইমপ্রেশন (Impressions) এর জন্য পেমেন্ট পাবেন। এই পদ্ধতিতে, বিজ্ঞাপন দেখানো হলে আপনি পেমেন্ট পাবেন, যদিও কেউ ক্লিক না করলেও। CPM পেমেন্ট ব্লগের ট্রাফিকের উপর নির্ভর করে, এবং সাধারণভাবে এটি উচ্চ ট্রাফিক ব্লগ বা সাইটগুলোর জন্য বেশি উপকারী হতে পারে।

CPM পেমেন্ট রেঞ্জ:

  • CPM পেমেন্ট প্রায় $1 থেকে $5 এর মধ্যে হয়ে থাকে, তবে এটি বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে।
  • যদি আপনার ব্লগে লক্ষ্যযোগ্য আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক ট্রাফিক থাকে, তাহলে CPM রেট আরও বাড়তে পারে।


৩. Cost Per Action (CPA):

কিছু বিশেষ অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন সিস্টেমে CPA পেমেন্ট ব্যবস্থা থাকে, যেখানে আপনি যখন ভিজিটর কোনো অ্যাকশন নেন (যেমন একটি পণ্য কেনা বা সাইন আপ করা) তখন আপনি আয় করেন। এটি CPC এর মতো কাজ করে তবে এই পদ্ধতিতে ক্লিকের পর কিছু নির্দিষ্ট কার্যকলাপ ঘটতে হবে।

CPA পেমেন্টের রেঞ্জ:

  • সাধারণভাবে CPA পেমেন্ট কিছুটা বেশি হয়ে থাকে, এবং এটি $1 থেকে $10 প্রতি অ্যাকশন বা কনভার্সন পর্যন্ত হতে পারে।


৪. এখনো কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয়:

  • ভিউ এর সংখ্যা: শুধু পেজ ভিউ বা ইমপ্রেশন সংখ্যার উপর নির্ভরশীল নয়, কন্টেন্ট, ট্রাফিক সোর্স এবং আপনার ব্লগের শ্রোতা কোন দেশের (ভূগোল) তা গুরুত্বপূর্ণ।
  • গুগল অ্যাডসেন্সের "Smart Pricing": গুগল কখনও কখনও বিজ্ঞাপনের রেট সমন্বয় করতে পারে, যদি বিজ্ঞাপনগুলো খুব কম ভিজিটর বা কম ইন্টারেকশন পায়।


৫. উদাহরণ:

ধরা যাক, আপনার ব্লগে ১০,০০০ ভিউ প্রতি মাসে হয়, এবং আপনি CPC, CPM অথবা CPA পদ্ধতির মাধ্যমে আয় করছেন:

  • যদি আপনার ব্লগে CPC ভিত্তিক বিজ্ঞাপন থাকে এবং প্রতি ক্লিকের জন্য $0.25 পাবেন, এবং আপনি প্রতি মাসে ২০০ ক্লিক পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার মাসিক আয় হবে:
    ২০০ ক্লিক × $0.25 = $৫০

  • যদি CPM ভিত্তিক বিজ্ঞাপন থাকে এবং প্রতি ১০০০ ভিউর জন্য $2 আয় হয়, তবে ১০,০০০ ভিউ হলে আপনার আয় হবে:
    (১০,০০০ ÷ ১,০০০) × $2 = $২০


৬. পেমেন্ট পদ্ধতি:

গুগল অ্যাডসেন্স পেমেন্ট প্রতি মাসে ঘটে। তবে, আপনি যে মাসে আয় করবেন, তার পেমেন্ট পরবর্তী মাসে পৌঁছাবে। গুগল অ্যাডসেন্সের পেমেন্টের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

  • সর্বনিম্ন $100 পেমেন্ট থ্রেশোল্ড থাকা আবশ্যক।
  • পেমেন্ট পদ্ধতি হিসেবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা পেপাল ব্যবহার করতে পারবেন।


৭. অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে রূপান্তর:

  • ট্রাফিক: আপনার ব্লগে ভাল মানের ট্রাফিক প্রয়োজন। প্রচুর ভিউ পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এক্সপোজার এবং ক্লিকস আপনার আয় বাড়াবে।
  • বিশেষ কিছু নিচের বিজ্ঞাপন পেতে সাহায্য করতে পারে, যেমন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসরড কনটেন্ট বা নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রচারণা।

নোট: প্রতিটি ব্লগের আয় নির্দিষ্ট নয়, এটি অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যেমন ট্রাফিক, কনটেন্ট, ভিজিটরের আচার-আচরণ এবং আরও অনেক কিছু।



Post a Comment

0 Comments